প্রকাশিত: Sat, Apr 15, 2023 4:12 PM আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 4:08 PM
ডা. জাফরুল্লাহ, তাঁর স্ত্রী শিরিন হক এবং রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা
ফজলুল বারী : আমরা এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বিজয়ী প্রজন্ম। তাই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে আমাদের তখন সখ্য নয়, শত্রুতা হয়েছে। প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে যারা যেখানে স্বৈরশাসক এরশাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তাদের আমরা এরশাদের দালাল বলে ঘৃণা করতাম। এরশাদবিরোধী আন্দোলন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কোনো ভূমিকা নেই। তিনি তখন এক রকম লো প্রোফাইলে কাটিয়েছেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে পরে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয় নারীপক্ষের আন্দোলন সূত্রে। রাষ্ট্রধর্ম বিরোধী আন্দোলনে এই এনজিও নারী সংগঠনটি দারুণ ভূমিকা রাখে। শিরীন হক, নাসরিন হক নামের দুইবোন এই আন্দোলনে নারীপক্ষের ব্যানারে আগুয়ান নেতৃত্বে ছিলেন। তখন আমাদের বন্ধু ওয়ার্কার্স পার্টির তরুণ নেতা নূরুল ইসলাম ছোটন ভাইয়ের সঙ্গে প্রেম চলছিলো নাসরিন হকের। মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের সমস্যা নিয়েও তখন কাজ করতেন নাসরিন হক। ছোটন ভাইকে নিয়ে প্রেস রিলিজ হাতে মিডিয়া পাড়ার অফিসে অফিসে আসতেন এই তরুণ নেত্রী।
ছোটন ভাইকে সবসময় নাসরিন হকের সঙ্গে দেখে আমরা মজা করে বলতাম আপনি কোন পক্ষ। নারীপক্ষ না পুরুষ পক্ষ। ছোটন ভাই হাসতে হাসতে মজা করে বলতেন, আমি নিরপেক্ষ। পরে তারা বিয়ে করেন। এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর থাকা অবস্থায় এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নাসরিন হক। এ নিয়ে পরে ছোটন ভাইকে অনেক ভুগতে হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ছোটন ভাইও ক্রমশ আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হন। ফেসবুকের কল্যাণে হঠাৎ হঠাৎ যোগাযোগ হয়।
শিরিন হক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী পরে বিয়ে করেন। শিরিন, নাসরিন হকের মায়ের সঙ্গে আমাদের সখ্য গড়ে উঠে অন্য কারণে। রাষ্ট্রধর্ম বিরোধী আন্দোলনে এই মায়ের একটি শ্লোগান তুমুল জনপ্রিয় হয়। ‘যার ধর্ম তার কাছে রাষ্ট্রের কি বলার আছে’। অনেকে মনে করেন, এটা সিপিবির শ্লোগান। সিপিবি পরে এই শ্লোগানটি গ্রহণ করেছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী-শিরিন হক দম্পতি মৌলবাদী হামলা থেকে রক্ষায় তখন তসলিমা নাসরিনেরও পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
আমরা যারা ঢাকা শহরের গরিব সাংবাদিক ছিলাম, অল্প পয়সায় অথবা বিনা পয়সায় চিকিৎসার জন্য ঢাকা কমিউনিটি হাসাপাতালের ডা. কাজী কামরুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে সখ্য হয়। দু’জনেই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মানুষকে অল্প খরচে চিকিৎসা দেবার চেষ্টা তাদের আন্তরিক চেষ্টা ছিলো সবসময়। আরেকজন চিকিৎসক মিডিয়ার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি চক্ষু বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।
গত কয়েক বছরে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নানা কারণে আলোচিত এক নাম। কখনও কখনও সমালোচিতও। তিনি কখনও আওয়ামী লীগ করেননি। আওয়ামী লীগ বিরোধীদের সঙ্গেই তার ওঠাবসা। শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি নয়, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পক্ষ নিয়ে কথা বলে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। আবার একজন স্বাধীন মানুষের মতো তিনি যখন তারেক রহমানকে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন, তখন বিএনপির লোকজনও তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কখনও কখনও তাকে অনেকের কাছে মনে হয়েছে, তিনি একজন এটেনশন সিকার।
তিনি প্র্যাকটিসিং মুসলমান ছিলেন না। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত ধারার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠায় দেশের মৌলবাদী শক্তির কাছেও তার একটি গ্রহণযোগ্যতা গড়ে উঠেছিলো। অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও তাঁর মরদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রদের হাতে না পৌঁছায় দিন শেষে বিষয়টি মৌলবাদীদের পক্ষেই গেছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্বামীর মরদেহের পাশে দাঁড়ানো সাহসিনী শিরিন হককে দেখে চমৎকৃত হয়েছি। শিরিন হক সবসময় কপালে লাল টিপ পরেন। এদিন শহীদ মিনারেও তিনি লাল টিপ পরে এসেছিলেন। আমাদের সমাজের প্রথাগত সদ্য বিধবার মতো মাথায় ঘোমটা দেওয়া ছিলো না। চিন্তা করেন তো এটি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরিন হক না হয়ে আওয়ামী লীগের কেউ হলে এতোক্ষণে মৌলবাদীরা কী করতো দেশে।
এন্টি আওয়ামী লীগ ঘরানার হলেও মৃত্যুর পর তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। যা বাংলাদেশে বিরল। ভিন্নমতের হলে এখানে কেউ শোক প্রকাশ পর্যন্ত করে না। জানাজা দাফনে যায় না। এটি তাঁর অন্যরকম গ্রহণযোগ্যতার স্মারক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে রাষ্ট্রনায়কোচিত উঁচু মনের পরিচয় দিয়েছেন। এরজন্য তাঁকে কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন জাফর ভাই। লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
